• E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৪ অপরাহ্ন

×

কেসিসি’র কয়েক কোটি টাকার ওয়ার্ড ভবনের সুবিধা পাচ্ছে না নগরবাসী : সিটি কর্পোরেশনকে স্বাবলম্বী করার সরকারী উদ্যোগ ব্যর্থ হচ্ছে

  • প্রকাশিত সময় : সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৯২ পড়েছেন

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) কয়েক কোটি টাকার ওয়ার্ড ভবনের সুবিধা পাচ্ছে না নগরবাসীর। প্রায় দুই দশক ধরে এসব স্থাপনা ব্যবহার না করায় একেবারেই জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নগরবাসীকে সহজলভ্য সেবা ও সুবিধা প্রদান এবং কর্পোরেশনের আর্থিক স্বাবলম্বীতার জন্য সরকারী সহায়তায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে এসব ভবন নির্মিত হলেও সবকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিকরা। এতে দিনদিন কর্পোরেশনের প্রতিনিধিদের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে নগরবাসীর। ফলে একদিকে যেমন সিটি মেয়র ও সরকারের প্রতি বিরুপ মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে। তেমনি খুলনা সিটি কর্পোরেশনকে স্বাবলম্বী করার নিজস্ব ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উদ্যোগ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। তবে খুলনাকে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করতে মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সিটি মেয়র। এদিকে, যে পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় কেসিসি কোটি কোটি টাকার ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে রয়েছে সে ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রক্রিয়া গ্রহণ ছাড়া নতুন কোন কিছু করলে ব্যর্থ হবে বলে মনে করেন নাগরিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।  

কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, নগরবাসীকে সহজলভ্য সেবা ও সুবিধা প্রদান এবং কর্পোরেশনের আর্থিক স্বাবলম্বীতার জন্য নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড অফিস কাম কমিউনিটি সেন্টারসহ নাগরিক সেবা কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এছাড়া নগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবার জন্য ৪টি হাসপাতাল ও ৩৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্র রয়েছে। এসব ওয়ার্ড অফিস ও নাগরিক সেবা কেন্দ্রগুলো থেকে শুরুর দিকে নগরবাসী যথাযথ সেবা ও সুবিধা পাওয়ায় ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু এসব কেন্দ্রগুলো পরিচালনায় সুষ্ঠ নীতিমালা ও আধুনিক সহজ পদ্ধতি অনুসরণ না করায় নগরবাসী ক্রমান্বয়ে ওয়ার্ড সেবাকেন্দ্র বিমূখ হয়ে পড়ে। ফলে সরকারী সহায়তায় সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্মিত সেবাকেন্দ্রগুলো অব্যবহৃত হয়ে যায়। এ কারণে ক্রমান্বয়ে প্রায় দুই দশক ধরে এসব স্থাপনার অধিকাংশই অবস্থাপনা ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে একেবারেই জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোন কোন ওয়ার্ড অফিস একেবারেই ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় সিটি কর্পোরেশন থেকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সঠিক প্রক্রিয়া ও সুষ্ঠ পরিকল্পনা না থাকায় ওয়ার্ড অফিসের সাথে নির্মিত অধিকাংশ কমিউনিটি সেন্টারগুলো থেকে নগরবাসী প্রত্যাশা অনুযায়ী সহজলভ্য ও সুবিধাজনক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে আশানুরূপ অনুষ্ঠানাদি না হওয়ায় এসব খাত থেকে কেসিসির কাঙ্খিত পরিমাণ রাজস্ব আসছে না। এতে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বীতাও গড়ে উঠছে না।

কেসিসিকে স্বাবলম্বী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সিটি মেয়র ও সরকারী উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসু হচ্ছে সে বিষয়টি সবার কাছে তুলে ধরতে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করা হয়। অনুসন্ধানের সূত্র ধরে গণমাধ্যমের একটি টিম কেসিসি’র নির্মিত ২৫টি ওয়ার্ডের বিষয়ে সরেজমিন তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে। সরেজমিনে ১৯ ডিসেম্বর নগরীর ১৬নং ওয়ার্ড অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯৮ সালে নগরীর ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের নির্মিত ভবনটি দুই দশকেই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত নিচতলার হলরুমটিও। কেসিসি’র তথ্যে গত এক বছরে কমিউনিটি সেন্টারটিতে মাত্র ২টি অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। ১.৬৭ একর জায়গার কাউন্সিলর অফিসের এলাকার মধ্যে একটি সুবিশাল পুকুর ও খালি জায়গা অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। সেখানে চিত্রবিনোদন ও পরিবেশ সম্মত হাঁটাচলার কোন সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ার্ডবাসীদের কয়েকজন জানান, সুবিশাল জায়গার ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসটি দাপ্তরিক কার্যক্রম ছাড়া ওয়ার্ডবাসীর তেমন কোন কাজে আসছে না। জরাজীর্ণ হয়ে পড়া নিচতলার হলরুমটিতে এখন আর কোন অনুষ্ঠান হয় না বললেই চলে। অন্যদিকে কার্যালয়ের পাশের পুকুর ও খালি জায়গাটির কোন সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। পুকুরটির ঘাট বাঁধাই করে ছোট পার্ক করা হলে ওয়ার্ডবাসী একটি বিনোদনের জায়গা পেত। কিন্তু সে বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের কোন পদক্ষেপ দেখছি না। কোটি কোটি টাকার সম্পদ অবহেলায় পড়ে রয়েছে।

আরও জানা গেছে, ১৬নং ওয়ার্ডেরই বয়রা পাসপোর্ট অফিসের বিপরীত দিকে সায়রা ফিলিং স্টেশনের পিছনে কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৫ সালে তিনতলা ভবন বিশিষ্ট মরহুম টুকু বিশ্বাস নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। আশানরূপ সেবা গ্রহীতা না পাওয়ায় ২০১৩ সাল থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে বিশাল ভবনটি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ভবনটির জানালা-দরজাসহ অন্যান্য আসবাবপত্র। এটিও নগরবাসীর কোন কাজে আসছে না।

১৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ আনিছুর রহমান বিশ্বাষ জানান, ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় নিচতলার হলরুমটিতে কোন অনুষ্ঠান হয় না বললেই চলে। অন্যদিকে কার্যালয়ের পাশের পুকুর ও খালি জায়গাটিরও সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। তবে ওয়ার্ডবাসিকে সহজলভ্য সেবা ও সুবিধা প্রদান এবং কর্পোরেশনের আর্থিক স্বাবলম্বীতা ও চিত্রবিনোদনের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সেখানে সব ধরণের নাগরিক সুযোগ সুবিধা থাকবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বয়রা টুকু বিশ্বাস নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নির্মাণের পরে সেখানে সিটি কর্পোরেশনের একটি স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু ছিল। প্রকল্পটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর কেন্দ্রটি একেবারে বন্ধ রয়েছে বলা যায় না, সেখানে স্যাটেলাইট ক্লিনিক স্বাস্থ্য সেবা চালু রয়েছে।

২০ ডিসেম্বর নগরীর ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১৬ শতাংশ জায়গার সামনের দিকে ১৯৯৯ সালে নির্মিত দোতলা ভবনটি কাউন্সিলরের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০০২ সালে নির্মিত অফিসের পিছনের তিনতলা ভবনটি সিটি গালর্স মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।

ওয়ার্ডবাসীদের কয়েকজন জানান, ওয়ার্ডের নাগরিকদের শিক্ষা সুবিধা বৃদ্ধির জন্য তিনতলা ভবনটি নির্মিত হলেও এখন কোন কাজেই আসছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য জায়গাটি উপযুক্ত না। কারণ পাশেই শহীদ শেখ আবু নাসের মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। জনগণের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা তিনতলা ভবনটি নাগরিকদেও কোন উপকারে আসছে না।

সিটি গালর্স মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন নাহার মুঠোফোনে জানান, শিক্ষার্থী স্বল্পতার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমিক শাখা করোনার পর থেকে বন্ধ রয়েছে। তবে এর প্রাথমিক শাখা ৫৫ জন শিক্ষার্থী এবং ৮জন শিক্ষক নিয়ে চালু রয়েছে।

২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ গাউসুল আজম জানান, ওয়ার্ড কার্যালয়ের পিছনের তিনতলা ভবনটিতে সিটি গালর্স মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকলেও করোনার পর থেকে বন্ধ রয়েছে। আর ওয়ার্ডেও গরীব লোকজন কোন অনুষ্ঠানে কার্যালয়ের খালি জায়গাটি ব্যবহার করে। তবে সিটি কর্পোরেশন সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার বর্গমিটারের একটি ৪তলা ভবন নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে। ভবনটি হলে ওয়ার্ডবাসীদের নাগরিক সুযোগ সুবিধা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে ২০ ডিসেম্বর নগরীর ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, ৫৫ শতকের ওয়ার্ড অফিসটির একপাশে কমিউনিটি ক্লিনিক এবং অন্য পাশে ওয়াসার পাম্প হাউস। ওয়ার্ড অফিস ভবনের নিচতলার হলরুমটি কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দোতলায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিস। সেখানে ওয়ার্ড সচিব একাই অফিস করছেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সুবিশাল সুসজ্জিত অফিস কক্ষটি ফাঁকা। কাউন্সিলর এখানে অফিস করেন কিনা জানতে চাইলে ওয়ার্ড সচিব মো. আবদুল্লাহ আল বাকি জানান, অধিকাংশ সময় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শমসের আলী মিন্টুসহ কর্মচারীরা কাউন্সিলরের নিজ বাড়ীতেই অফিস করেন। কেসিসি’র তথ্যে, প্রায় ৭৬ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত ওয়ার্ড কার্যালয়টির কমিউনিটি সেন্টারে গত এক বছরে মাত্র ৫টি অনুষ্ঠান হয়েছে।

ওয়ার্ড কার্যালয়টির কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়া কম হওয়া সত্বেও কেন আশানুরূপ অনুষ্ঠান হচ্ছে না এ বিয়য়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর শমসের আলী মিন্টু জানান, এ বিষয়টি সম্পূর্ণ সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন। তারাই ভাড়া দিয়ে থাকে। তাই এ বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।

২২ ডিসেম্বর নগরীর ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ২০০২ সালে ওয়ার্ড কার্যালয়টি নির্মিত হলেও মনে হয় ভবনটি বৃটিশ আমলে নির্মিত। জরাজীর্ণ কার্যালয়টির নিচ তলায় অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে। কর্মরত একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই জানালেন দুপুরে অনুষ্ঠান রয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় গিয়ে দেখা যায় দুটি কক্ষের একটি ফ্যামিলি বাসা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্য কক্ষটি তালাবদ্ধ। ভবনের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা নজিবুল ইসলাম নামে একজন জানালেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে অফিস করেন না। তিনি তার নিজ বাড়ীতে অফিস করেন।

২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমাম হাসান চৌধুরী ময়না জানান, অনেক আগে থেকেই কার্যালয়টি পরিত্যক্ত হওয়ায় আমি নিজ বাড়ীতেই অফিস করছি। পরিত্যক্ত হলেও কার্যালয়টির নিচতলায় কেউ অনুষ্ঠান করতে চাইলে তো মানা করা যায় না। অন্যদিকে, ভবনটি পাহারা দেওয়ার জন্য তো একজন লোক লাগে। তাই ভবনের দোতলায় ওয়ার্ড অফিসের বার্থ রেজিস্টার মিজানুর রহমান বসবাস করে। মাঝে মাঝে তার পরিবার তার সাথে থাকে। তবে সব সময় থাকেন না।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বপন কুমার হালদার জানান, ১৬নং ওয়ার্ডের বয়রা টুকু বিশ্বাস নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ২০০৫ সালে নির্মাণ করা হয়। সেখানে সিটি কর্পোরেশনের একটি স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু ছিল। তবে ২০১৩ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি স্যাটেলাইট ক্লিনিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সচেতন নাগরিক সমাজ (সনাক) খুলনার সভাপতি এ্যাড. খুদরত-ই-খুদা জানান, দেশের নাগরিকদের টাকায় মাত্র দুই দশক আগে নির্মিত ওয়ার্ড কার্যালয়গুলো জরাজীর্ণ হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এটা খুবই দুঃখজনক। সেই সাথে নগরবাসীকে সহজলভ্য সেবা ও সুবিধা প্রদান এবং কর্পোরেশনের আর্থিক স্বাবলম্বীতার জন্য সরকারী সহায়তায় ভবনগুলো নির্মিত হলেও সবকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিকরা। এমনও অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলররা ওয়ার্ড কার্যালয়ে অফিস না করে বাসায় অফিস করছে। কিন্তু ওয়ার্ডের জনগণকে সঠিক সেবা প্রদান এবং তাদের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য ওয়ার্ড অফিসই ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। এতে দিনদিন কর্পোরেশনের প্রতিনিধিদের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে নগরবাসীর। ফলে নাগরিকদের সিটি মেয়র ও সরকারের প্রতি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনকে স্বাবলম্বী করার নিজস্ব ও সরকারের উদ্যোগ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের অফিস ঘিরেই কিন্তু প্রত্যেকটি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ওয়ার্ডের বিভিন্ন নাগরিক সেবা, সরকারী ত্রাণ ও অনুদান কার্যক্রমসহ সামাজিক বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান কাউন্সিলর কার্যালয়কে ঘিরে হয়। এক কথায় বলা যায় কাউন্সিলর কার্যালয়টি হওয়া উচিত একটি ওয়ার্ডের প্রাণ কেন্দ্র। কাজেই প্রত্যেকটি অফিসকে সচল, কর্মক্ষম এবং জনমুখী করা দরকার। এতে করে যেমন জনগণের চাহিদা পূরণ হবে সেই সাথে জনপ্রতিনিধিদের সাথে তাদের একটি আস্থার জায়গা তৈরি হবে। যে পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় কেসিসি কোটি কোটি টাকার ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে রয়েছে সে ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রক্রিয়া গ্রহণ ছাড়া নতুন কোন কিছু করলে উদ্দেশ্যে ব্যর্থ হবে বলে মনে করেন এ নাগরিক নেতা।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক জানান, খুলনা নগরীকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ১৪৯৬ কোটি ২৩ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ‘খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাসের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকার সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন। যার মধ্যে রয়েছে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রাস্তার সংস্কার ও উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ নতুন ড্রেন ও পাম্প হাউজ নির্মান, ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি করা লক্ষে ৩১ ওয়ার্ডে কার্যালয় নির্মাণ, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতি মোকাবেলায় জলাশয় সংরক্ষন, খেলার মাঠ নির্মাণ, পার্ক উন্নয়ন ও শহরের বিভিন্ন মোড়/চত্ত্বর উন্নয়ন, প্রকল্প এলাকার জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর দৃশ্যপট অনেকটাই বদলে যাবে। নাগরিক সুবিধাসহ জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন হবে। তিনি আরও জানান, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে সব সময় আন্তরিক। খুলনাকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করতে সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালানোর কথাও জানান তিনি।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA